মালদা / রতুয়া।
রতুয়া থানা এলাকার কালুটোলা–কাহালা অঞ্চলে জমি সংক্রান্ত একটি বিরোধ ক্রমশ গুরুতর রূপ নিয়েছে। এই ঘটনায় ০৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে করা জিডি এন্ট্রি ও এফআইআর (UP Case No-757/25)-এর তথ্য সামনে আসায় স্পষ্ট হয়েছে যে এটি শুধুমাত্র পারিবারিক বিবাদ নয়, বরং সংঘবদ্ধ ও প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা।
ভুক্তভোগী পক্ষের অভিযোগ, প্রায় তিন মাস আগে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে রোবো দমন সাঁই, সিম্পল, খুরশিদ সাঁই সহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা একত্রিত হয়ে সাজামুদ্দিন, তাঁর স্ত্রী এবং এক নাবালক শিশুর উপর নির্মম হামলা চালায়। অভিযোগ অনুযায়ী, হামলাকারীরা লাঠি ও ডাণ্ডা দিয়ে মারধর করে এবং শিশুটির মুখে ইট দিয়ে আঘাত করে, যার ফলে তার অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর হয়ে পড়ে।
তিন মাস পরেও অবস্থার উন্নতি নেই
পরিবারের দাবি, ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও আজও শিশু ও অন্যান্য আহতদের স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকদের মতে, পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত সংকটজনক এবং যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভুক্তভোগী পরিবার আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
গুরুতর ধারায় মামলা, তবুও গ্রেপ্তার নেই
ভুক্তভোগী সতিজমুদ্দিন খাঁই (৪০)-এর অভিযোগের ভিত্তিতে ০৬.১০.২০২৫ তারিখে রতুয়া থানায় মামলা দায়ের হয়। পুলিশ নথি অনুযায়ী, এই মামলায় BNS-এর ধারা ৩২৯(৩), ১১৫(২), ১১৭(২), ১১৮(২) সহ একাধিক গুরুতর ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। এফআইআরে ১৪ জনেরও বেশি অভিযুক্তের নাম রয়েছে, যার মধ্যে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
এফআইআরে উল্লেখ রয়েছে যে অভিযুক্তরা অবৈধভাবে পাকা ঘর নির্মাণ শুরু করে। এতে বাধা দিলে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত, মহিলাদের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং সংঘবদ্ধ মারধর করা হয়। গুরুতর আহত দম্পতিকে প্রথমে রতুয়া হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে মালদা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়, যেখানে তাদের মাথায় একাধিক সেলাই দিতে হয়।
মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, এফআইআর দায়ের হওয়ার পরও অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে যে মামলা প্রত্যাহার না করলে পুরো পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এর ফলে পরিবারটি নিজেকে সম্পূর্ণ অনিরাপদ মনে করছে।
পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এত গুরুতর ধারা ও মেডিকেল রেফার থাকার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই অভিযুক্তদের সাহস বেড়েছে।
এলাকায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ
ঘটনার পর থেকে কালুটোলা ও আশপাশের গ্রামগুলিতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, সময়মতো কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে। তারা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার, ভুক্তভোগী পরিবারকে পুলিশি সুরক্ষা এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

